সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রাঙা প্রাসাদ। একসময়ের বাগানবাড়ি, আহসান মঞ্জিল। এখন সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড়। মুঘল আমলের একটু ছোঁয়া পেতে প্রাচীন এই প্রাসাদ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
পাটুয়াটুলির রাস্তাটা বেশ প্রশস্ত। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি অলিগলি পার হওয়ার ঝামেলা এখানে খুব একটা পোহাতে হয় না। বামে মোড় নিয়ে ওয়াইজঘাটের রাস্তা ধরে হাতের বামে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ফেলে সোজা তাকালে চোখে পড়বে একটি লাল রংয়ের প্রাসাদ। কাছে গিয়ে ৫ টাকায় টিকিট কেটে ঢুকলেই বিশাল উদ্যান। অনেক রকমের ফুলগাছ, পাতাবাহার, নারকেল আর সুপারিগাছে ভরা সবুজ অঙ্গন।
মন মাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যেন নব যৌবন ফিরে পায়। বাতাসে ফুলের সুবাস, সামনে প্রাচীন প্রাসাদ– মুহুর্তেই নিয়ে যায় কোনো এক কল্পনার রাজ্যে। প্রেয়সীর হাত ধরে মৃদু পায়ে হেঁটে চলা। এভাবেই সপ্তাহের ৬ দিনই প্রাণের স্পন্দন জাগে আহসান মঞ্জিলে।
প্রকৃতি ছেড়ে এবার প্রাসাদের দিকে যাওয়া যাক। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে তখনকার জামালপুর পরগনার (বর্তমান ফরিদপুর-বরিশাল) জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ রংমহল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর জমিদারের ছেলে শেখ মতিউল্লাহ এটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করেন।
১৮৩৫ সালের দিকে বেগমবাজারে বসবাসকারী নবাব আবদুল গনির বাবা খাজা আলীমুল্লাহ এটা কিনে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৮৭২ সালে নবাব আবদুল গনি নতুন করে নির্মাণ করে তার ছেলে খাজা আহসানউল্লাহর নামে ভবনের নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।
এটি একটি দোতলা ভবন। বারান্দা ও মেঝে মার্বেল পাথরে তৈরি। প্রতিটি কক্ষের আকৃতি অষ্টকোণ। প্রাসাদের ভেতরটা দুভাগে বিভক্ত। পূর্বদিকে বড় খাবার ঘর। উত্তরদিকে লাইব্রেরি। পশ্চিমে জলসাঘর। পুরো ভবনের ছাদ কাঠের তৈরি। নিচতলায় খেলার ঘরে রয়েছে বিলিয়ার্ড খেলার জন্য আলাদা জায়গা। দরবার হলটি সাদা, সবুজ ও হলুদ পাথরের তৈরি। দোতলায় বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার আর তিনটি মেহমান কক্ষ। পশ্চিম দিকে আছে নাচঘর আর কয়েকটি আবাসিক কক্ষ।
এই ভবনটি ১৮৮৮ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আহসান মঞ্জিলই ঢাকার প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য। যেখানে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা হয় নবাবদের হাতে। মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের সবসময়ই আকৃষ্ট করত। লর্ড কার্জন ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। বাংলাদেশ সরকার আহসান মনঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে। ১৯৯২ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা ৪ হাজার ৭৭। এই রংমহলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ১৯০৪ সালের আলোকচিত্রশিল্পী ফ্রিৎজকাপের তোলা ছবি অনুযায়ী ৯টি কক্ষ সাজানো হয়েছে।
কীভাবে যাবঃ
ঢাকার সদরঘাট- গাবতলী সড়কের পাশে আহসান মঞ্জিল অবস্থিত। ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাসে করে অথবা সিএনজি অটো রিকশায় আপনি এখানে আসতে পারবেন।
কি করবেনঃ
আহসান মঞ্জিলের আশেপাশে চমৎকার পরিবেশে ছবি তুলতে পারেন। আহসান মঞ্জিল ঘুরে দেখা ছাড়াও এখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে আপনি নৌকা ভ্রমনও করতে পারেন।
কিছু নোটঃ
পরিদর্শনের সময়সূচী
গ্রীষ্মকালীন সময়সূচী: (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) – (শনিবার-বুধবার) সকাল ১০.৩০ টা – বিকাল ৫.৩০ টা। শুক্রবার- বিকেল ৩.০০ টা – সন্ধ্যা ৭.৩০ টা।
শীতকালীন সময়সূচী: (অক্টোবর –মার্চ) – (শনিবার-বুধবার) সকাল ৯.৩০ টা – বিকাল ৪.৩০ টা। শুক্রবার – দুপুর ২.৩০ টা – সন্ধ্যা ৭.৩০ টা।
বৃহস্পতিবার – সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকবে।
টিকেটের মূল্য তালিকা
প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি দর্শক = ৫ টাকা জনপ্রতি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি শিশু দর্শক (১২ বছরের নিচে) = ২ টাকা জনপ্রতি, সার্কভুক্ত দেশীয় দর্শক = ৫ টাকা জনপ্রতি, অন্যান্য বিদেশি দর্শক = ৭৫ টাকা জনপ্রতি, উল্লেখ্য যে, প্রতিবন্ধি দর্শকদের জন্য কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না ও পূর্ব থেকে আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে জাদুঘর দেখতে দেয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে দেয়া হয়ে থাকে।
অগ্রিম টিকিটের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে উল্লিখিত দিনগুলোতে আহসান মঞ্জিল বন্ধ হওয়ার ৩০ মিনিট আগ পর্যন্ত টিকেট সংগ্রহ করা যায়।