সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুর পালা বদলে আসে শীত। শীতকালকে বলা হয় পাহাড় ভ্রমণের আদর্শ সময় তাই শীতকালে রাঙ্গামাটির হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। কুয়াশা মাখা হিমেল পরিবেশ প্রকৃতিকে আরো নবীন করে তোলে। তাই এই শীতে শতশত গাড়ির যান্ত্রিক কোলাহলে ধ্যান ভাঙে গুরুগম্ভীর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের শহর রাঙামাটির। সারাটা শীত মৌসুম জুড়ে যেন উৎসব লেগে থাকে এই ছোট্ট পাহাড়ী মফস্বল শহরটিতে। ১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টির সংস্পর্শে আসতে হলে আপনাকে শীত মৌসুমেই আসতে হবে রাঙামাটি। রাঙ্গামাটি বেড়াতে এলে হাতে অন্ততঃ দুই দিন সময় নিয়ে আসবেন। তা না হলে ভ্রমন অপূর্ণ রাখার যন্ত্রণা নিয়েই কিন্তু ফিরতে হবে।
কিভাবে যাবঃ
আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন রাঙামাটিতে আসতে হলে চট্রগ্রামের অক্সিজেন রাঙামাটির বাস টারমিনাল আসতে হবে। এখান থেকে আধা ঘন্টার ব্যবধানে আপনি পাবেন পাহাড়ীকা ও লোকাল বাস সার্ভিস।
পাহাড়ীকা বাসের ভাড়া ১১০ টাকা এবং লোকাল বাসের ভাড়া ৮৫টাকা।পাহাড়ীকা বাসে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা এবং লোকাল বাসে ৩-সাড়ে ৩ ঘন্টা।সকাল ৭টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া যায় বাস।এছাড়া যারা আরামদায়ক ভ্রমন করতে চান তাদের জন্য আছে বিলাস বহুল সার্ভিস এস. আলম, ইউনিক, হানিফ ও বিআরটিসি।এইসকল বাস সার্ভিসের ভাড়া ১০০-১২০টাকা। সময় লাগবে ২.৩০-৩ ঘন্টা।এছাড়া নিজস্ব গাড়ী অথবা ভাড়া করা মাইক্রো, কার, ক্যাব নিয়েও আপনি আসতে পারেন রাঙামাটি। নিজস্ব গাড়ী নিয়ে আসলে সময় এবং অর্থ দুই’ই সাশ্রয় হবে ।
কোথায় থাকবেনঃ
রাঙামাটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালমানের হোটেল আছে। যেমনঃ হোটেল সুফিয়া, নীডস হিল ভিউ, মোটেল জর্জ, হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, শাইনিং হিল গেষ্ট হাউজ, টুকটুক ইকো ভিলেজ, হোটেল আনিকা অন্যতম।
এগুলো মোটামুটি ভালো মানের হোটেল। ভাড়া ৫০০টাকা হতে ২০০০টাকা পর্যন্ত। আবার কমদামী কিছু হোটেলও আছে। যেমনঃ মধুমিতা, সৈকত, শাপলা, ডিগনিটি, সমতা, উল্লেখযোগ্য। এগুলো ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া পর্যটনের রয়েছে নিজস্ব মোটেল। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। কটেজগুলোর প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০০-৫০০০ টাকা। সরকারি বিভিন্ন দফতরের রেষ্ট হাউস, গেষ্ট হাউস এবং বাংলোগুলো নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ এবং অনুমতি সাপেক্ষে ভাড়া দেওয়া হয়।সৌন্দর্যের রাণী পার্বত্য সুন্দরী রাঙামাটি আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সুতরাং আর দেরি নয়, এখনি চলে আসুন।বদলে যচ্ছে রাঙামাটি। দিনে দিনে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখানকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ না হওয়ায় হতাশ পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রাঙামাটি থেকে। তবুও কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকারী উদ্যোগ না থাকায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প।
দেখার মত যায়গাঃ
শুভলং
পর্বতপ্রেমী পর্যটকরা যেতে পারেন শুভলং অভিমুখে। পাহাড় হ্রদের নিবিড় নৈকট্যে আপনার মনেও সৃষ্টি করতে পারে ভিন্ন এক অনুভূতি। কিন্তু একটাই র্দূভাগ্য শীত মৌসুমে ঘুমিয়ে থাকে এখানকার পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো। রিজার্ভ বাজার থেকে জাহাজে করে শুভলং যেতে হবে। শুভলং এর পাহাড়ের উপরে উঠে রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন।ঝুলন্ত ব্রিজ
রাঙ্গামাটিতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত ব্রীজ। নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি দুইটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে হৃদ্দিক সম্পর্ক। সেতুটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি আপনাকে এনে দেবে ভিন্ন দ্যোতনা। এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন। কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। ওপারেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ইচ্ছে হলেই দেখতে পাবেন আদিবাসী জীবনযাপনের ক্ষয়িষ্ণু চালচিত্র।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর সমাধি
এই রাঙামাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাত বীরশ্রেষ্ঠদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ। রাঙামাটি শহর হতে জলপথে একঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত বুড়িঘাটে এই সমাধি অবস্থিত। চারিদিকে কাপ্তাই লেকের নীলজল খেলা করে আর তার মাঝখানে একটি ছোট্ট দ্বীপে ঘুমিয়ে আছেন আমাদের চির স্মরণীয় অসামান্য বীর। দেশপ্রেমিক আর ইতিহাস সচেতন পর্যটকরা এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পাবেন অপূর্ব এক সুযোগ।সুবলং ঝর্না
রাঙ্গামাটির সুবলং-এর পাহাড়ি ঝর্ণা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এসব ঝর্ণার নির্মল জলধারা পর্যটকদের হৃদয়ে এক ভিন্ন অনুভূতির কাঁপন তোলে। বরকল উপজেলায় ছোট-বড় ৮টি ঝর্ণা রয়েছে। বর্তমানে এ এলাকায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। রাংগামাটি সদর হতে সুবলং এর দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার।
যাতায়াত: রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার, পর্যটন ঘাট ও রাংগামাটি বিভিন্ন স্থান থেকে স্পীড বোট ও নৌ-যানে করে সহজেই সুবলং যাওয়া যায়। যার ভাড়ার পরিমাণ ঘন্টা প্রতি স্পীড বোট ঘন্টায় ১২০০-১৫০০/- এবং দেশীয় নৌযান ৫০০-৮০০/- টাকা।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
তের হাজার একর এলাকা নিয়ে কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে কাপ্তাই উপজেলায় গড়ে উঠেছে ‘কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান’। সারি সারি পাহাড় আর প্রকৃতির অপর্ব সমন্বয় ঘটেছে এখানে। এ বনভূমি বিচিত্র বন্যপ্রাণী ও পাখ-পাখালির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বর্ষাকালে মেঘ পাহাড়ের মিতালি আর শীতে কুয়াশার লুকেচুরি – প্রকৃতির এমন কারুকাজ বেশ রোমঞ্চকর বৈকি। বনের ভেতর সারি সারি সেগুন, জারুল, গামার আর কড়ই গাছের মাঝ বরাবর পায়ে হেটে চলা পর্যটকদের অফুরন্তু আনন্দের খোরাক। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বন বিভাগে দু’টি বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের চারপাশে নদী, পাহাড় আর সবুজের সহাবস্থান অপূর্ব সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করেছে। মূলত জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারন এবং ইকো-ট্যুরিজমের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রাংগামাটি জেলা সদর হতে এর দূরত্ব আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার।