বিবরনঃ
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়বদল ইউনিয়ন। গ্রামের নাম মানিগাঁও। পাহাড়ি স্নিগ্ধ জলের শান্ত নদী ‘জাদুকাটা’, এই গ্রামের পাশ দিয়েই বহমান।জাদুকাটার তীরে মানিগাঁও গ্রামেই দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান। ঘুরে আসতে পারেন সুন্দর এই শিমুল বাগান থেকে।প্রায় একশ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে মানিগাঁও গ্রামের এই শিমুল বাগানে প্রায় ১৪ বছর আগে তিন হাজার শিমুলের চারা রোপণ করেছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদীন।সেই গাছগুলো এখন বসন্তে রক্তরাঙা ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। বসন্তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই বাগানের শাখা-প্রশাখা ঢেকে থাকে ফুলে। ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায় পাখির দল।বিশাল পরিসরের এই শিমুল বাগান প্রকৃতি প্রেমীদের সহজেই নজর কাড়ে।
কিভাবে যাবঃ
ঢাকা থেকে সড়ক পথে সরাসরি সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়।ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন এবং মহাখালী বাস স্টেশন থেকে এনা পরিবহনের নন এসি বাস যায় সুনামগঞ্জ। ভাড়া ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা।সুনামগঞ্জ নতুন ব্রিজ থেকে মোটর বাইকে বিন্নাকুলি বাজার হয়ে সরাসরি যাওয়া যায়। প্রতিটি বাইকে দুইজন করে যাতায়াত করলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রতিটিতে একজনই চড়া উচিত। ভাড়া ২শ’ টাকা।এছাড়া সুনামগঞ্জ থেকে অটো রিকশায় লাউড়ের গড় বাজার গিয়ে সেখান থেকে জাদুকাটা নদী পার হলেই শিমুল বাগান। পাঁচ জন চড়ার উপযোগী অটো রিকশার ভাড়া ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা।
কি খাবেনঃ
শিমুল বাগানের ওপাড়েই লাউড়ের গড় বাজারে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ আছে। সেগুলোর মধ্যে কাদিরের রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাবে খাবারের পদ ও স্বাদে বৈচিত্র্য।শুকনো খাবার সাথে বহন করলে ভালো হবে।
কোথায় থাকবেনঃ
সারাদিন বেড়িয়ে থাকতে পারেন সুনামগঞ্জ শহরে। এ শহরের কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হল- পূর্ব বাজারে হোটেল নূর, হোটেল মিজান, পুরাতন বাস স্টেশনে হোটেল নূরানী, হোটেল প্যালেস, স্টেশন রোডে হোটেল সুরমা ভ্যালী ইত্যাদি।এসব হোটেলে আড়াইশ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে।তবে যাদের সময় সঙ্কট তারা ঢাকা থেকে রাতের বাসে যাত্রা করে পরের দিন শিমুল বাগান বেড়িয়ে আবার রাতের বাসেই ফিরে আসতে পারেন।
দেখার মত কি কি যায়গা আছেঃ
স্থানীয় এলাকাবাসীদের মতে, ১২ বছর বয়সে জয়নাল আবেদীন তার পরিবারের সবার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। উদ্যমী এই মানুষটি জীবনে অল্প বয়সেই পড়ালেখা ছেড়ে দেন। নানা পেশা বদলে একসময় মৎস্য ব্যবসা শুরু করেন। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইনল্যান্ড ফিশারিজের মাধ্যমে ইজারা নেন টাঙ্গুয়ার হাওর। বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন তিনি।শুধু ব্যবসা বাণিজ্যে তার মন টিকে থাকেনি। মানুষের কল্যানে কিছু করার চিন্তা করেন। গাছপালার প্রতি ভালোবাসা ছিলো প্রথম থেকেই। তার এই ভালোবাসা ও স্থানীয় সমস্যা মোকাবেলা থেকেই এই বাগান তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি।হাওরাঞ্চলে বর্ষা এলেই প্রতিনিয়ত পাড় ভাঙতে থাকে। বাড়িঘর ভেসে যায়। আর এটি সমাধানে শক্ত শিকড়ের গাছপালা হলো প্রথম ভরসা। সেসব ভাবনা থেকেই ১৯৮৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় ৯০ হাজার করচ গাছ লাগিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি হিজল গাছও লাগিয়েছিলেন বেশ কিছু। স্থানীয়ভাবেই এগুলোর চারা সংগ্রহ করেন তিনি। শুকনো মৌসুমে নিজেই গাছে পানি দিতেন। এগুলোর যত্নে কখনও কম গুরুত্ব দেননি তিনি।হিজল করচ লাগানোর পর তিনি ভাবলেন আরও কিছু করার। তাই তৈরি করলেন শিমুল বাগান। ২০০২ সালের দিকে শুরু করেন শিমুল বাগানের কাজ। প্রথমেই নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত করে সেখানে প্রাকৃতিক সার দিলেন। এভাবেই প্রস্তুত করে নিলেন মাটি। তারপর সেখানে লাগিয়ে দিলেন ৩ হাজার শিমুলের চারা। এভাবেই তৈরি হয় দেশের বড় শিমুল বাগান। প্রায় এক যুগ পর গাছগুলো অনেক বড় হয়ে উঠেছে। জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন এই বাগানের দেখাশোনা করেন।