বিবরনঃ
বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে চার ধরণের কঠিন শিলা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি। এছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গণ্ডশিলাও)।এ কারণে সিলেট এলাকার জাফলং-এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। আর এই এলাকার মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণকে ঘিরে।
জাফলং-এ পাথর ছাড়াও পাওয়া গেছে সাদামাটি বা চীনামাটিও, যদিও সেখানে মাটি বা বালি পরিশোধন করার মতো কোনো অবকাঠামো নেই।
এই এলাকায় যেমন সাধারণ বাঙালিরা বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী। আদমশুমারী অনুযায়ী জাফলং-এ ১,৯৫৩ জন খাসিয়া উপজাতি বাস করেন।
কিভাবে যাবঃ
বাস অথবা ট্রেন। আর একটু আলিসান ভাবে যেতে চাইলে বিমানে। তবে বিমানে যেতে বাড়ন করব। যাত্রা পথের অনেক সৌন্দর্য দেখতে পারবেন না। বাসে গেলে সায়েদাবাদ বা মুগদা থেকে উঠে পড়ুন ঢাকা সিলেট এর বাসে। ঢাকা থেকে সিলেট এর বাস ভাড়া ৪৭০ টাকা যেকোন বাসে। বাংলাদেশের অন্য যে কোন জায়গা থেকে সিলেট আসা যায়। সেক্ষেত্রে দূরত্ব ভেদে বাস ভাড়া এববগ জার্নির সময় পার্থক্য করে। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে ৫/৬ ঘণ্টার মত সময় লাগে। ভৈরবে হোটেল উজান ভাটি বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রা বিরতি পাবেন। এর পর হবিগঞ্জ হয়ে সোজা সিলেট কদমতলী বাস স্ট্যান্ড।
কি খাবেনঃ
জাফলং এর রেস্টুরেন্টগুলোতে আপনি মজাদার খাবার ও পানীয় সুলভ মুল্যে পাবেন।
কোথায় থাকবেনঃ
সিলেটে থাকার জন্য বেশকিছু ভালমানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা, এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ
১। হোটেল ইস্টার্ন গেইট এন্ড পানাহার রেস্টুরেন্ট।
২। হোটেল গুলশান।
৩। হোটেল দরগা ভিউ।
৪। গ্রিনল্যান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট।
৫। হোটেল সিটি লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল।
৬। সুরমা ভ্যালী রেস্ট হাউজ।
৭। হোটেল বাহারাইন রেসিডেনসিয়াল।
৮। হোটেল কুরাইশি রেসিডেন্স।
৯। হোটেল আজমীর।
১০।হোটেল পায়রা।
১১।হোটেল সুপ্রিম।
১২।হোটেল পলাশ।
১৩।হোটেল ওয়েস্টার্ন।
১৪।হোটেল অনুরাগ।
১৫।হোটেল আল-আমীন।
১৬।হোটেল গার্ডেনস ইন।
১৭।হোটেল ফেরদৌস।
১৮।হোটেল পানামা।
১৯।হোটেল গ্রীন।
২০।হোটেল হিলটাউন।
২১।হোটেল রোজভিউ।
২২।হোটেল স্টার প্যাসিফিক।
২৩।হোটেল তাজমহল।
দেখার মত কি কি আছেঃ
জাফলং-এর বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালে ভারত সীমান্ত-অভ্যন্তরে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়শ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরণা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে। এছাড়া সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে পর্যটকদের। মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারত সীমান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর স্রোত বেড়ে গেলে নদী ফিরে পায় তার প্রাণ, আর হয়ে ওঠে আরো মনোরম। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলং-এর অন্যতম আকর্ষণ। পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে জাফলং-এ আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা।এই মেলাকে ঘিরে উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বর্ষাকাল আর শীতকালে জাফলং-এর আলাদা আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত গাছগাছালি আর খরস্রোতা নদী হয় দেখার মতো। তাছাড়া পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্যও যথেষ্ট মনোরম।