সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
‘ছুটি’ শব্দটি আমাদের কর্মচঞ্চল জীবনে নিয়ে আসে অসাধারন এক খুশির বার্তা। এই ছুটিকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে পারে আনন্দময় ভ্রমণ। বাংলাদেশের একেবারে উত্তর কোণে, মানচিত্রের শীর্ষের দিকে অবস্থান করছে একটি জেলা। নাম তার ঠাকুরগাঁও। এই জেলাতেও রয়েছে অমূল্য সব প্রত্ননিদর্শন। ঈদের ছুটিকে যথাযথ কাজে লাগানো যেতে পারে এসব প্রত্নস্থান ভ্রমণের মাধ্যমে যা আমাদের ঈদের খুশিকে বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ।ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি। তার মধ্যে হরিপুর রাজবাড়ি, রাজা টঙ্কনাথের বাড়ি, গোরক্ষনাথ মন্দির, দুই বিঘা আমগাছ, জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদসহ আরো অনেক মন্দির, মসজিদ, মঠ, রাজবাড়ির সমৃদ্ধ নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ সহজেই মুগ্ধ করে দর্শকদের।ঠাকুরগাঁও সদর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। সদর থেকে ৪০-৫০টাকা বাস ভাড়ায় চলে যাওয়া যায় রাণীশংকৈল উপজেলায়। সেখান থেকে মাত্র ১০ টাকা রিকশাভাড়ায় পৌঁছানো যায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী রাজা টঙ্কনাথের রাজবাড়িতে। এটি নির্মাণ করেন ১৯৯৫ সালে রাজা টঙ্কনাথ। এই জনপদ ১১০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মালদুয়া পরগণার অন্তর্গত ছিল বলে আগে এই রাজবাড়ি মালদুয়ার রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের আস্থা লাভ করার জন্য রাজা বুদ্ধিনাথের ছেলে টঙ্কনাথ এখানে ‘মালদুয়ার কোট’ স্থাপন করেছিলেন। পরে রাজা টঙ্কনাথের স্ত্রী রাণী শংকরী দেবীর নামে এই এলাকার নাম হয় রাণীশংকৈল। রাজবাড়িতে ঢোকার প্রধান সড়কটির ওপর রয়েছে একটি সুন্দর ব্রিজ। পাশ দিয়ে কুল কুল ধারায় বয়ে চলেছে একটি ছোট্ট শীর্ণ নদী ‘কুলিখ’। নদীর পাশদিয়ে হাঁটা পথে একটু এগোলেই চোখে পড়ে রাজবাড়ির প্রধান ভবন। এককালে জাকজমকপূর্ণ কারুকাজে খচিত এই প্রাচীন রাজভবনটিতে এখনো অনেক কারুকাজ করা দেওয়াল অবশিষ্ট আছে।
রাজবাড়িতে ঢোকার পথে দেখা যায় কারুকাজ করা বিশাল সিংহ দরজা। একসময় মার্বেল পাথরে আচ্ছাদিত ছিল এর মেঝে। ভবনের ভেতরের প্রাচীরে দেখা যায় মনোমুগ্ধকর কারুকাজ। অপূর্ব লাল ইটের এই রাজবাড়ি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দণ্ডায়মান। মূল রাজবাড়ির উত্তর পূর্বকোণে রয়েছে কাছারি বাড়ি, পূর্ব দিকে দুটি পুকুর ও প্রায় ২০০ মিটার দূরে রামচন্দ্র জয়কালী মন্দির। চারপাশে অসংখ্য গাছপালা রাজবাড়িকে দান করেছে বাড়তি সৌন্দর্য। রাজা টঙ্কনাথকে নিয়ে অনেক লোককথা এখানে প্রচলিত। কথিত আছে রাজা টঙ্কনাথ ব্রিটিশ রাজ কর্মচারীকে টাকা পুড়িয়ে চা বানিয়ে খাইয়েছিলেন বলে ব্রিটিশরা তাকে ‘চৌধুরী’ উপাধি প্রদান করে। এই জমিদার বাড়িটিতে একসময় হাতিশালা ছিল। সবকিছু মিলিয়ে অপূর্ব এই প্রত্ননিদর্শন ভ্রমণের একটি অসাধারণ স্থান হিসেবে পরিচিত।
হরিপুর উপজেলায় রয়েছে প্রায় দেড়শ বছর পুরনো একটি রাজবাড়ি। ১৮৯৩ সালে রাবেন্দ্র চৌধুরী ও তার ছেলে জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এই রাজবাড়ি তৈরি করেন। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে বাসে করে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজবাড়িটিতে। এর প্রধান আকর্ষণ দ্বিতীয় তলার দেওয়ালের অপূর্ব কারুকাজ, লতাপাতার নকশা আর রাজা জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি। ভবনটির পূর্বপাশে রয়েছে একটি শিব মন্দির এবং এর সামনে একটি নাট মন্দির। অনেক আগে এই রাজবাড়ির মধ্যে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল। ১৯০৩ সালে এই রাজবাড়ির পাশে আরো একটি রাজবাড়ি নির্মিত হয়। সব মিলিয়ে অপূর্ব এই রাজবাড়ি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।ঠাকুরগাঁও সদরের আর্টগ্যালারি মোড় থেকে গাড়িতে করে মাত্র ৩০-৪০ টাকায় যাওয়া যায় পীরগঞ্জ হাটে। সেখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ। মসজিদের প্রবেশমুখে রয়েছে একটি বড় তোড়ন। ১৮৬৭ সালে নির্মিত এই মসজিদের রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা। রয়েছে তিনটি বড় আকৃতির গম্বুজ যার শীর্ষদেশ অসাধারণ কাচ পাথরের কারুকাজ দিয়ে সজ্জিত। এই মসজিদের ছাদে রয়েছে ৮০টি মিনার যার প্রতিটির উচ্চতা ৩৫ ফুট এবং মিনারগুলোর গায়ে খচিত রয়েছে আশ্চর্য সুন্দর কারুকাজ আর নকশা। মসজিদের দেয়ালেও রয়েছে প্রচুর লতাপাতা আর ফুলের আর্কষণীয় নয়নাভিরাম নকশার শিল্পসুষমা। জানা যায় এই নকশার কারিগররা ছিলেন ভারতীয় খ্যাতনামা কারিগর। ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি।পীরগঞ্জ উপজেলারই গোরকুই বা গোরকই গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসী গোরক্ষনাথের মন্দির। এর প্রধান আকর্ষণ হলো একটি শত বছরের অদ্ভূত কূপ। কূপের ভেতরে রয়েছে ছোট ছোট সিঁড়ি। কথিত আছে হাজার নর নারীর স্নানের পরও এই কূপের পানি এক ফোঁটাও কমে না। আকর্ষণীয় এই কূপ ও মন্দির দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে ভিড় জমায়।এই জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় রয়েছে পুরো দুই বিঘা জমি নিয়ে ছড়ানো একটি আমগাছ। ২০-২৫ কিলোমিটার দূরত্বে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার হরিণমারি এলাকার মণ্ডুমালা গ্রামে এই সুবিশাল আম গাছটি অবস্থিত। আর্টগেলারি মোড় থেকে ৫০-৬০ টাকা গাড়ি ভাড়ায় এখানে যাওয়া যায়। গাছটির ডালপালা এমনভাবে ছড়ানো যা দূর থেকে দেখলে প্রশস্থ একটি পাহাড় বলে মনে হয়। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই সূর্যপুরী জাতের আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার একটি দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর অসংখ্য দর্শনার্থী এই আমগাছ দেখার জন্য এখানে ভিড় জমায়।বাড়িতে বসে ঈদের আনন্দ যতটুকু উপভোগ করা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য সবাই মিলে কোনো দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের আনন্দ। প্রাচীন পুরাতত্ত্বগুলো দর্শনে একদিকে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আমাদের ধারণার পরিধি বিস্তৃত হয় তেমনি অন্যদিকে এসব পুরাকীর্তির অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও কারুকাজ আমাদের মনকে বিপুল আনন্দ দান করে। তাই ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্নস্থানগুলোতে ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা এবারের ঈদকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে পারি।
কীভাবে যাবঃ
ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও রেল উভয় পথেই যাতায়াত করা যায়। ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলায় যে কয়েকটি বাস চলাচল করে কর্ণফুলী পরিবহন তার মধ্যে অন্যতম।
কর্ণফুলী পরিবহন
ঢাকা থেকে রংপুর, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, বোদা, পঞ্চগড় এবং নীলফামারী উত্তরাঞ্চলের রুটে যে কয়েকটি বাস চলাচল করে কর্ণফুলী পরিবহন তার মধ্যে থেকে একটি।
কী খাবেনঃ
এখানে বিভিন্ন খাবার হোটেল ও রেস্তরা আছে ।।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল পাওয়া যায় যার মূল্য বিভিন্ন মানের আছে
যা যা দেখবেনঃ
জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিমান বন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জহাট। হাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ।
বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ
প্রায় ২০০ বছরের পুরনো সূর্য্যপূরী আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভারতের সীমান্তবর্তী হরিণ মারি গ্রামে অবস্থিত। গাছটি প্রায় ২.৫ বিঘা জমির উপর বিস্তৃত। গাছটির শাখা-প্রশাখা অশ্বহ্থ গাছের মত মাটির দিকে ঝুঁকে পরার প্রবনতা লক্ষ করা যায়। এটিকে এশিয়া মহাদেশের সর্ববহৎ আমগাছ বলা যায়।
ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এন্ড ট্যুরিজম লিঃ,পীরগঞ্জ,ঠাকুরগাঁও অবস্থান: পৌর ভবনের বিপরীতে, পীরগঞ্জ,ঠাকুরগাঁও। আয়তন: ১০ একর।
রাজভিটা