সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
খৈয়াছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। মীরসরাই উপজেলায় অবস্থিত অন্যান্য জলপ্রপাত যেমন কমলদহ ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা, ঝরঝরি ঝর্ণা প্রভৃতির তুলনায় খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও এর ঝিরিপথ অন্যতম বৃহৎ।খৈয়াছড়া ঝর্ণায় মোট ৯টি বড় ঝর্ণার ধাপ (তথা ক্যাসকেড) ও অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ রয়েছে।মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ঝর্ণারটির অবস্থানের কারণে ঝর্ণাটির নামকরণ করা হয়েছে “খৈয়াছড়া ঝর্ণা”।
কীভাবে যাবোঃ
ঢাকার যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠবেন। যাওয়ার পথে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই পার হয়ে বারতাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামবেন। পথে যানজট না থাকলে ৪/৫ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন মিরেরসরাই। বড় তাকিয়া বাজারে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের কাছে গিয়ে স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসা করলেই তারা বলে দেবে কোন পথে যেতে হবে। ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে নেমে পূর্বদিকে গ্রামের রাস্তা ধরে দশ মিনিট হাঁটলে পথে রেললাইন পরবে, রেললাইন পার হয়ে আরো দশ মিনিট হাঁটলে ঝিরি পাবেন। ইচ্ছে করলে ঢাকা চট্টগ্রাম রোড থেকে ঝিরি পর্যন্ত আপনি সি.এন.জি নিয়ে (৭০-৮০টাকা লাগবে) যেতে পারবেন। ঐখান থেকে আপনাকে খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে। প্রয়োজন হলে সেখান থেকে গাইডও নিয়ে নিতে পারেন। ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা একটিই, আর পথে আরো অনেক অ্যাডভেঞ্চারপিয়াসীর দেখা পাবেন, কাজেই পথ হারানোর ভয় তেমন একটা নেই বললেই চলে। এছাড়া সীতাকুন্ড বা মিরেরসরাই নেমে ঐখান থেকে সি.এন.জি নিয়েও আসতে পারেন ঝিরির আগ পর্যন্ত।
কোথায় থাকবোঃ
বড়তাকিয়া বাজারে থাকার কোন হোটেল নেই। কিন্তু আপনি চাইলে চেয়ারম্যানের বাংলোয় উঠতে পারেন। এছাড়াও স্থানীয় লোকদের সাথে ব্যবস্থা করে তাদের বাড়ীতে থাকতে পারবেন। মিরেরসরাই বা সীতাকুন্ডে আপনি থাকার জন্য বেশ কিছু স্থানীয় হোটেল পাবেন। মিরেরসরাই বা সীতাকুন্ডে খাওয়ার জন্য অনেক রেস্টুরেন্টও পাবেন।
কী খাবেনঃ
ওখানে খাওয়ার কোন সুব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে সাথে করে কিছু নিয়ে যেতে হবে।
যা যা দেখবেনঃ
ঝর্ণার বিবরণ পড়তে ব্যক্তিগতভাবে আমার একদমই ভালো লাগে না। কারন আমি চাই, যে ঝর্ণা আমি দেখতে যাবো তার রূপ নিজের চর্মচক্ষু দিয়ে উপভোগ করতে। আমার মত আরো অনেকেই হয়ত এমন। তবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খৈয়াছড়া ঝর্ণার বিবরণ একটু জেনে নেয়া প্রয়োজন কারণ অনেকেই কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়া খৈয়াছড়া ঝর্ণায় গিয়ে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা একটি ঝর্ণা হলেও এর ধাপ হলো ১২ টি। পাহাড় বেয়ে বেয়ে একটি একটি করে ধাপ দেখতে হয়। তাই একে খৈয়াছড়া ট্রেইলও বলা হয়। ১২ টি ঝর্ণার পাশাপাশি এই ট্রেইলে রয়েছে ছোট বড় অনেক ঝিরিপথ। খৈয়াছড়া মুখ থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা। পাহাড়ি রাস্তায় পাখির কিচিরমিচির, ঝিরিপথের পানি পড়ার শব্দ শুনতে শুনতে দুই ঘন্টা ট্র্যাকিং এর পর চোখে পড়ে ঝর্ণার প্রথম ধাপ। দু’ঘন্টা ট্র্যাকিং করে ক্লান্তি নিয়ে যখন ঝর্ণার ঠান্ডা পানিতে গাঁ ভিজাবেন তখন দেখবেন শরীরের সব অবসাদ আর ক্লান্তি ঝর্ণার পানির ধারায় ধুয়েমুছে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আর প্রথম ঝর্ণা দেখে শেষ করার পর উপরের ঝর্ণাগুলোও দেখে আসার আকাঙ্খা আরো বেড়ে যেতে বাধ্য।
ট্রেইলের সবগুলো ঝর্ণাই অসম্ভব সুন্দর। সবগুলো ঝর্ণায় ১০/১৫ মিনিট করে সময় ব্যয় করলে পুরো ট্রেইল শেষ করতে তেমন ক্লান্তি লাগবে না আশা করি। যারা সাঁতার জানেন তাদের জন্য ১২ নাম্বার ধাপে রয়েছে আরেক রোমাঞ্চ! ঝর্ণার সামনে ছোটখাটো একটা পুকুর রয়েছে যেখানে আপনি সাঁতার কাটতে পারবেন মনের সুখে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার বিবরণ আর বাড়ালাম না। এর বাকি রূপটা না হয় সারপ্রাইজ হিসেবেই থাকুক!