সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
বাংলাদেশের চরাঞ্চলের সৌন্দর্য ভিন্ন রকম আনন্দ দেয় প্রকৃতি প্রেমী মনকে। রূপের আঁধার এই চরগুলোর মধ্যে শান্তিময় অপূর্ব একটি চর হলো ভোলার চর কুকরি মুকরি। অনেকটা সাগরের কোল ঘেঁষে খরস্রোতা মেঘনা আর তেতুঁলিয়া নদীর মোহনায় এর অবস্থান। এখানেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
মেঘনার প্রচন্ড স্রোত যেন সমুদ্রেরই আরেক রূপ। মেঘনাই এই চরের জন্মদাত্রী। চরের ৩ লাখ ৬০ একর জমিতে বন বিভাগের উদ্যোগে শ্বাসমূলীয় গাছ দ্বারা বনায়ন করা হচ্ছে। শুরুতে শুধু শ্বাসমূলীয় গাছ থাকলেও পরবর্তীতে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর ইত্যাদি গাছ যুক্ত করা হয়। বিপুল সংখ্যক কেওড়া গাছও চোখে পড়বে আপনার। এই বনায়ন চরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। আর প্রাণীদের অভয়াশ্রম হওয়ায় নানান রকম প্রাণীর বিচরণ দেখতে পাবেন যার অনেক কিছুই হয়ত আপনি আগে দেখেন নি, নামও শোনেন নি। যেমন- কাঠ ময়ূর, মথূরা ইত্যাদি। এছাড়া চিত্রা হরিণ, বানর, বন মোরগসহ আরও অনেক প্রানী তো আছেই।
এখানকার মানুষের মূল পেশা মাছ ধরা আর কৃষিকাজ। তাদের জীবন ধারাও দেখতে ভালো লাগে। কত সরল, সহজ, সাধারণ! কিন্তু সংগ্রাম কম নয়, পরিশ্রম কম নয়। তাদের মূল লড়াই প্রকৃতির সাথে। তাদের সাথে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে। নৌকায় বেড়াতে পারেন।
শীতের সময় কুকরি মুকরির রূপ ভিন্ন। সূদুর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহ ভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেমন অপূর্ব হয় দ্বীপের সৌন্দর্য সেই সময়!চর কুকরিমুকরিকে বলা হয় স্বপ্নের দ্বীপ। স্বপ্নের মতোই সূর্য ওঠে অবাক করা রূপ নিয়ে, অস্তও যায় মনকে তৃপ্ত করে। এই চরের পর আছে ঢাল চর। সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন আপনি। ঢাল চরের পরই বঙ্গপোসাগর।
এলাকাটি এখনো ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পর্যটন সেবা দিতে শুরু করে নি। এর যেমন অসুবিধা আছে তেমনি সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এখানে কোন কৃত্রিমতার দেখা পাবেন না আপনি।
কীভাবে যাবেনঃ
চর কুকরি মুকরিতে যেতে চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে জলপথে কোনো লঞ্চে চড়ে প্রথমে ভোলায় আসতে হবে। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে ভোলায় পৌঁছতে হবে। ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা। তারপর ভোলা লঞ্চঘাট থেকে বাসস্টেশনে এসে চরফ্যাশনের বাসে চড়ে আসতে হবে চর আইচায়। চরফ্যাশন উপজেলার চর কচ্ছপিয়ার দূরত্ব ভোলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। চরফ্যাশন থেকে হিউম্যান হলারে আসতে হবে কচ্ছপিয়া ঘাট। মানুষ কম হলে অটোরিকশা করে চলে আসতে পারেন। এখান থেকে কচ্ছপিয়া উপজেলা ট্রলারঘাট হয়ে আবারও ইঞ্জিন নৌকায় বেশ খানিকটা জলপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরি মুকরিতে। কুকরি মুকরি থেকে সকালবেলা একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরতে বের হতে পারেন। ভাড়া ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা নেবে। তবে যাওয়ার আগে সমুদ্রের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে যাবেন।
কী খাবেনঃ
চর কুকরি মুকরি বাজারে তেমন ভালো কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। হাতেগোনা কয়েকটি খাবারের হোটেল রয়েছে। স্থানীয়দের হাতের রান্না করা খাবার পাবেন হোটেলগুলোতে। সম্ভব হলে বাজার থেকে তাজা মাছ কিনে রাঁধতে দিন, দামে সস্তা আর স্বাদেও টাটকা। এখানে ব্রয়লার মুরগি আর ডিম একটু অপ্রতুল। খাবার পানি সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
কোথায় থাকবেনঃ
আবহাওয়া ভালো থাকলে ক্যাম্পিং করতে পারেন। তা ছাড়া কোস্ট ট্রাস্ট, বন বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে আলোচনা সাপেক্ষে থাকার ব্যবস্থা আছে।
যা যা দেখবেনঃ
নিশ্চুপ প্রকৃতি, সবুজের সমারোহ আর মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো পশুপাখির দল যাদের আকৃষ্ট করে তাদের জন্য ঘুরে দেখার চমৎকার একটি স্থান হতে পারে সাগর তীরের চর কুকরি মুকরি। নৈসর্গিক সৌন্দর্য, নয়নাভিরাম দৃশ্য, ম্যানগ্রোভ অরণ্য যেকোনো পর্যটকের সৌন্দর্যপিপাসু দৃষ্টিতে আকৃষ্ট করবে, যা অনেকের কাছে এখনো অজানা। চরফ্যাশনে বসবাস করেও অনেকে জানে না চর কুকরি মুকরি বালুর ধুম, কুয়াকাটা, কক্সবাজারের সাদৃশ্য দৃশ্যাবলী এখানেও বিদ্যমান। ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অনেকটা সাগরের কোলঘেঁষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এই চরেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। কথিত আছে, এক সময় এই চরে শুধু কুকুর আর ইঁদুর (স্থানীয়দের কাছে যা মেকুর নামে পরিচিত) ছাড়া আর তেমন কিছুই চোখে পড়তো না। আর তাই এই চরের নামকরণ হয় কুকরি মুকরি। চর কুকরি মুকরির বনে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি। আর পাখি ও সরীসৃপ হিসেবে এই বনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বক, বনমোরগ, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুঁইসাপ, বেজি, কচ্ছপ ও নানা ধরনের সাপ।