বাংলাদেশে যারা ঢাকা শহরে থাকেন তাদের প্রকৃতির দেখা পাওয়া বা মনোরম কোন জায়গায় যেতে হলে অনেক দূর পথ পারি দিতে হয় ঢাকার বাইরে। আবার ঢাকার বাইরে যেকোনো জায়গায় যাওয়াটা এবং যাতায়াত,থাকা,ঘুরা অনেক সময়ের ব্যাপার। আর খরচও লাগে অনেক।
তাই কম সময়ে ঢাকার আশেপাশেই ঘুরা যায় এমন অনেক সুন্দর জায়গায় আছে ঘুরার মতন। যেখানে আপনি একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন। আপনার অবশ্যই এসব জায়গায় ঘুরে ভালো লাগবে এবং কিছু দিনের জন্য হলেও আপনার মধ্যে একটি ঝরঝরে ভাব এনে দিবে।
চলুন জেনে নেই ঢাকার আশেপাশের এমন কয়েকটি জায়গা সম্পর্কে –
১। গোলাপ গ্রাম–
নদী পথ পার হয়ে ছোট্ট একটি গ্রাম। তবে গ্রাম হলেও পুরোটাই গোলাপের বাগান দিয়ে পরিপূর্ণ । এখানে গেলে আপনার মনে হবে যেন বিশাল একটি গোলাপের বাগানে ভেতর আপনি ঘুরছেন। সরু পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখবেন রাস্তার দুপাশ গোলাপের বাগান দিয়ে ঘেরা।
কিভাবে যাবেন?
মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে সাহদুল্লাহপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে ৩০ মিনিট পরপর ইঞ্জিনচালিত বোট ছাড়ে। সাহদুল্লাহপুর যেতে যেতে ৪৫ মিনিট- ১ ঘণ্টা লাগবে।সেখানে একেক জনের জন্য ২০-৩০ টাকা করে নিবে। অথবা নিজেরা হাতে চালানো বোট নিতে পারেন, যেতে দেড় ঘন্টার মতো লাগবে।
২। পানাম ও মেঘনার পার-
পানাম সিটি ঢাকা শহর থেকে একদমই আলাদা এবং অন্য রকম। পুরনো বাড়িগুলো দেখে দেখেই দিন পার হয়ে যাবে।
পৃথিবীর ১০০ টি ধ্বংস প্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানামনগর। World Monument Fund ২০০৬ সালে পানামনগরকে বিশ্বের ধ্বংস প্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। ঈসাখাঁ-র আমলের বাংলার রাজধানী পানামনগর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।
ওখান থেকে কাছেই মেঘনা নদী। নদীর ওপারে গেলেই দেখবেন কাশফুলে ঘেরা বিস্তৃত মাঠ! চাইলে পানাম ঘুরা শেষে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার অদূরে ২৭কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে নারায়নগঞ্জ এর খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত এই নগর।ঢাকা থেকে যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ।গুলিস্থান থেকে ‘মোগরাপারা ‘ এর যেকোনো বাসে (সোনারগাঁপরিবহন) করে চলে আসা যায় ‘মোগরাপারা’, সেখান থেকে অটোরিকশাযোগে দশ-পনের মিনিটে চলে আসা যায় পানামনগরীতে।
৩। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি–
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জমিদারবাড়িগুলোর একটি। ঢাকা জেলা সদর থেকে পয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত।মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। জমিদার বাড়ির পুরটাই মনোরম পরিবেশে ঘেরা!
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ বা সরাসরি সাটুরিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। জন প্রতি ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা। সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা বা লোকাল সিএনজিতে করে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে। জন প্রতি ভাড়া ১০ টাকা। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে।
জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য জন প্রতি ১০টাকা।
৪। মহেরা জমিদার বাড়ি, টাঙ্গাইল–
টাঙ্গাইলে ঘুরার মতন অনেক জায়গা আছে যা আপনি এক দিনে ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। তবে তার মধ্যে মহেরা জমিদার বাড়ি সবচেয়ে সুন্দর। এটি তিনটি স্থাপনা নিয়ে তৈরি। বাড়ির ভেতরের দিকে বিশাল খাঁচায় বিভিন্ন রকম পাখি পালা হয়।
তিনটি স্থাপনার প্রতিটাতে অসাধারণ কারুকার্য করা। এসব কারুকার্য দেখলেই মন ভরে যাবে।
কিভাবে যাবেন?
টাঙ্গাইলের জমিদার বাড়ি দেখতে হলে খুব সকালে বাসা থেকে বের হতে হবে। কারণ যেতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা লাগবে। মহাখালি থেকে “ঝটিকা সার্ভিস” নামে বাস ছারে। এছাড়া টাঙ্গাইল জাওয়ার আরো বেশ কিছু ভাল বাস আছে। মহেরা জমিদার বাড়ির বর্তমান নাম মহেরা পুলিশ ট্রেইনিং সেন্টার। ওখানে যেতে হলে নামতে হবে”নাটিয়া পাড়া” বাস স্ট্যান্ড এ। সময় লাগবে ২-২.৩০ ঘন্টার মত। নেমে একটা অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে। রিক্সায় করে সরাসরি মহেরা জমিদার বাড়িতে যাওয়া যাবে। ভাড়া ২০-৩০ টাকা। জমিদার বাড়ি ঢুকতে টিকেট কিনতে হবে,জন প্রতি ২০টাকা।
৫। পদ্মারিসোর্ট–
ঢাকা থেকে ৪০ কি.মি. দূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং নামক স্থানে পদ্মা নদীতে চড়ের উপর এই রিসোর্টটি অবস্থিত।পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত বলেও জায়গাটি অতি মনোরম আর সুন্দর। বর্ষা ঋতুর সময় গেলে আপনার বেশি ভালো লাগবে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী থেকে এই রুটে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস প্রতি ১০/১৫ মিনিট পর পর চলাচল করে। গুলিস্তান সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের পূর্ব পাশ এবং যাত্রাবাড়ী গোলচত্ত্বরের পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেকে ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-লোহজং এর বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে এই জেলার ভাড়া ৬০ টাকা। মাওয়া ফেরিঘাট থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোট রয়েছে। পদ্মা নদীর টাটকা ইলিশের তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে চাইলে যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্টে।এছাড়া আরও রয়েছে টাটকা শাকসবজি, গরু, মুরগি ও হাসের মাংস। এছাড়া মৌসুমি ফলমূল তো রয়েছেই। সকালের নাস্তার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়ে ১০০ টাকা এবং দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য জনপ্রতি খরচ পড়ে ৩০০ টাকার মতো।
পর্যটকগণ ইচ্ছা করলে অর্ধেক বেলা অথবা পুরো ২৪ ঘন্টার জন্য কটেজ ভাড়া নিতে পারেন।সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ভাড়া ২,০০০ টাকা।সকাল ১০ টা থেকে পরের দিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভাড়া ৩,০০০ টাকা।
অনেক দিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য আর আসলেই মন ভালো করে দেয়ার মতো জায়গা এগুলো।তাই একদিন ছুটি পেলে ইচ্ছে করলেই কাউকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এসব জায়গায়।
৬। বেলাই বিল
গাজিপুরের বেলাইবিল মনোরম একটি জায়গা। চেলাই নদীর সাথেই বেলাই বিল।এখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়।যেটাতে ভালো লাগে উঠে পড়ুন। সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিলে নিজেরাই চালিয়ে ঘুরতে পারেন। বিকেলে এই বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়, সাথেশাপলার ছড়াছড়ি। শুধু চারিদিক তাকিয়ে থাকবেন। আবার কিছুক্ষণ পরপরই বাতাসের ঝাপটা লাগবে গায়ে। বেশি সময় নিয়ে গেলে অবশ্যই খাবার নিয়ে যাবেন। যাওয়ার সময়নদীরপাড় দিয়ে হাঁটতে থাকি,রওনাদেই আমাদের গন্তব্যে।
কিভাবে যাবেন?
গাজিপুর সদর পর্যন্ত যাওয়ার পর, সেখান নেমে টেম্পুতে কানাইয়া বাজার যাবেন। ভাড়া নিবে ১০ টাকা করে। রিকশাতেও যেতে পারেন।কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে,ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন।
এছাড়াও নদীর পাশে‘ভাওয়ালপরগণা’ (শ্মশান ঘাটবা শ্মশান বাড়ি) আছে। চাইলে নদীর পাশেই এই শ্মশান বাড়িটি দেখে আসতে পারেন।
৭। নুহাশপল্লী
হুমায়ূন আহমেদ-কে সবাই চেনেন, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি করেছেন ‘নুহাশ পল্লী’।নুহাশপল্লী গাজীপুরে অবস্থিত একটি বাগানবাড়ী, নুহাশ চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র।নুহাশপল্লীতে ঢুকে মাঠ দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলে হাতের বামপাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের ঘর।এরপাশেই পুরনো লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচু বাগানের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
নুহাশ পল্লীর পুরো জায়গাটি সবুজ গাছপালা দিয়ে আবৃত। দেখলেই মন জুরিয়ে যাবে। এখানে অনেক প্রজাতির এবং অনেক রকমের গাছ রয়েছে।গাছের গায়ে সেটে দেয়া পরিচিতিফলক রয়েছে। আরও রয়েছে সুইমিংপুল আর ছোট্ট পুকুর। মাঠের মাঝখানে একটি গাছের উপর ঘর তৈরি করা আছে, যা আবাক করবে আপনাকে!হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় অনেক নাটক সিনেমার অন্যতম শুটিংস্পট এটি।
তাই যারা হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ভক্ত আছেন তারা অবশ্যই এই জায়গায় ঘুরে আসুন।
কিভাবে যাবেন?
প্রথমে গুলিস্তান থেকে প্রভাতী-বনশ্রী বাসে হোতা পাড়াবাজারে নেমে সেখান থেকে ছোট টেম্পুতে করে পৌঁছে যাবেন নুহাশ পল্লী। এছাড়া নিজস্ব গাড়ি বা মাইক্রো ভাড়া করে যেতে পারেন। এপ্রিল থেকে নভেম্বর নুহাশপল্লী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
১২ বছরের উপরে জন প্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা।
৮। শালবন বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লা
শালবন বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতির অসংখ্য এবং চমৎকার সব প্রাচীনস্থাপনাগুলোর একটি।
দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন।
কিভাবে যাবেন?
প্রথমে কুমিল্লা শহরে যাবেন। কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কি. মি. দূরে কোট বাড়িতে শালবন বিহার অবস্থিত ।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত বাসে যেতে ২-৩ ঘণ্টা লাগবে।কুমিল্লা এসে চলে যান টমটম ব্রীজ সিএনজি স্ট্যান্ডে। সেখানে সিএনজি করে কোটবাড়িতে এবং সেখান থেকে অটোরিকশা বা রিকশায় করে যেতে হবে শালবন বিহার।
৯। আড়াইহাজার মেঘনার চর:
ঢাকার কাছে আড়াইহাজার চর এলাকা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খুব অল্প সময়ে।বিস্তীর্ণ এলাকায় এরকম মনোরম পরিবেশ আর কোথাও নেই শহরের আশেপাশে!
সারাদিনের জন্য ঘুরতে আসতে পারেন এখানে।নদীর তীরে ট্রলারে সন্ধ্যার সময়টা কাটাতে পারেন।ঢাকার কাছে মেঘনা নদীর মাঝখানে এই বিশাল বালির চর। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশিই কাশবন। এখানেবালি অনেক শক্ত তাই কোন চোরাবালির ভয় নেই। ভাটার সময় এখানে ঘুরতে যাওয়া বেশি সুবিধার। এ সময় ১০-১৫ ফিট বালির চরথাকে। দেখতে পারবেন কাশবন, খোলা আকাশে পাখির মেলা আর মাঝে মাঝে ট্রলার আর জাহাগের শব্দ।
কিভাবে যাবেন?
প্রথমে গুলিস্তান থেকে দোয়েল বা সদেশ পরিবহন এ মদনপুর যাবেন। ভাড়া নিবে ৪৫ টাকা। সেখানে নেমে আড়াইহাজার এর জন্য সিএনজি নেবেন। ভাড়া নিবে ৫০ টাকা।
মদনপুর নামার পর আশেপাশে অনেক দোকানপাট বা হোটেলে খেয়ে নিতে পারেন।
যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া এবং ট্রলারের খরচ মিলিয়ে মোটামোটি ৩/৪ জনের জন্য ৭০০-১০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
১০। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক:
বিস্তৃত শালবনের ভেতর প্রাচীর দিয়ে তৈরি এই পার্ক। ভেতরআছে সরু পিচঢালা সড়ক। দু’দিকে নানা প্রজাতির গাছ দিয়ে বিস্তৃত।থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখেএশিয়ার সর্ববৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুরে নির্মিত হয়েছে । ২ ইঞ্চি কাচের দেয়াল দিয়ে ঘেরা আছে হিংস্র বন্য পশুদের জায়গা। তাই আপনি তাদের কাছ থেকে দেখতে পারলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। তাছাড়া খুব সুন্দর ব্যবস্থায় তৈরি করা হয়েছে এটি।
যা যা আছে-
পার্ক সমন্ধে যেকোনো তথ্য জানার জন্য এখানে প্রথমেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র।কোর সাফারি পার্কে বন্য প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে।পার্কের গাড়িতে চড়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ,জলহস্থি, নীল গাই, এবং আরও অনেক বিদেশী বন্য পশুও। তবে এখানে ঢুকতে ২০০ টাকা দিয়ে জন প্রতি টিকিট কাটতে হয়। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট ও পেলিকেন আইল্যান্ড।মজার বিষয় হলো এখানে বিশাল জায়গা নিয়ে পাখিদের রাখা হয়েছে। পাখির খাঁচার কাছে যেতেই আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবে। নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি এখানে আছে।
খাওয়া-দাওয়ার জন্য আছে টাইগার ও লায়ন রেস্টুরেন্ট।ওয়াচ টাওয়ার থেকে আপনি দেখতে পাবেন সমগ্র সাফারি পার্কের মনোরম দৃশ্য। দেখতে পাবেন পার্কের ভিতর বিচরণরত বন্যপ্রাণী।
এশীয় তৃণভোজী এবং ছোট মাংসাশী প্রাণী, পাখি সরিসৃপ ও উভয়চর প্রাণী নিয়ে এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারি প্রতিষ্ঠিত।এ ছাড়া তৈরি করা হয়েছে হাতির আশ্রম।বন্য পশুপাখির জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আছে আটটি জলধারা ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ। এ ছাড়াও সাফারি পার্কে আছে বাটারফ্লাই পার্ক,বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক,স্নেক পার্কে ক্রোকোডাইল ও লিজার্ড পার্ক।সাফারি পার্কে হাতির পীঠে উঠার ব্যবস্থাও আছে।
কিভাবে যাবেন?
গাজীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত বাঘের বাজার। সেখান থেকে আরও সামনে কিছু দূর থেকে দেখা যাবেবঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের গেইট।সেটি পার করে দেখতে পারবেন বাঘ, সিংহ, বাজ পাখি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য।
১১। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকা:
ঢাকার কাছে সরিষা ফুলের রাজ্য মানিকনগর। কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন।তাহলে ইচ্ছেমতো ভালো লাগা যেকোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইরের রাস্তা ধরে কিছুদূরসামনে গেলে ধলেশ্বরী ব্রিজপেরিয়ে বিন্নাডিঙ্গি বাজার থেকে বাঁয়ের সড়কে আরও সামনে মানিকনগর। সেখানে সড়কের দুইপাশে সরিষা ক্ষেত। সেখান থেকে আরেকটু দূরে গেলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকা এলাকায় আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত। এখানে বিকাল কিংবা সকালে গেলে আপনার মন ভরে যাবে।
সময় নিয়ে ঘুরে আসুনএই সুন্দর ও উপভোগ্য জায়গাগুলো থেকে। শিশুদের সঙ্গে বড়দেরও ভালো লাগবে।
১২। মৈনট ঘাট:
ঢাকার খুব কাছেই পদ্মা নদীর পাড় নিয়ে ঢাকার নবাবগঞ্জের দোহার উপজেলায় মৈনট ঘাট অবস্থিত। এখানে আসলেই মুগ্ধ হবেন। কারণ পদ্মা নদীর উত্তাল জলরাশি আপনাকে সমুদ্রের মতো দেখাবে। নদীর পাড়টায় বালুর কারণে কিছুটা বিচের মতো দেখায়।খালি পায়ে হেঁটে আরও ভালো লাগবে আপনার। মৈনট ঘাট জায়গাটা আসলেই দারুণ মনে হবে। অভিজ্ঞতাটা কিছুটা সমুদ্র দেখার মতই।
খুব ভোরবেলা আসলে আরও বেশি আনন্দ করে দেখতে পারবেন ঘাটের আশেপাশের পরিবেশ। ভোরে জেলেরা এখানে মাছ ধরে এবং বাজার বসে। চাইলে স্পিডবোট বা ট্রলার নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে সব থেকে মজা পাবেন বর্ষার সময়। এছাড়াও আশেপাশে উকিলবাড়ি, জজবাড়ি আছে। সেখানে ঘুরে আসতে পারেন।
কিভাবে যাবেন?
– গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশ্যে যমুনা পরিবহন বাস ছাড়ে। ভাড়া ৯০-১০০। দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পৌছায় যাবেন।ফেরার সময়ও একই বাসে ফিরতে পারবেন।
– এখানে রাতে থাকার মতো আশেপাশে কোন ব্যবস্থা নেই। দিনে আসে দিনেই ফিরতে হবে।
– মৈনট ঘাটে দুটি ভালো ভাতের হোটেল আছে। একটি আতাহার চৌধুরীর হোটেল আরেকটি জুলহাস ভূঁইয়ার।
– কার্তিকপুর বাজারে শিকদার ফাস্টফুড নামক একটা খাবারের দোকান আছে। এছাড়াও আরো কিছু ভাতের হোটেলও আছে।
১৩। জল জঙ্গলের কাব্য, পুবাইল:
অসাধারন সুন্দর জায়গা,জল জঙ্গলের কাব্য একটি প্রাকৃতিক রিসোর্ট এর নাম। রিসোর্টটি পূবাইলে এক সাবেক পাইলট তৈরি করেছেন। তবে রিসোর্টে আধুনিক কিছু নাই বললেই চলে। পাইলট ভদ্রলোক খুব বেশি পরিবর্তন করতে চায়নি গ্রামটিকে।প্রকৃতিকে খুব বেশি পরিবর্তন না করে বিশাল এক জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে রিসোর্ট।
বিশাল একটি বিল, পুকুর আর বন-জঙ্গল আছে এখানে। যে কেউ চাইলে একটা দিন এখানে কাটিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। খুবই অন্যরকম পরিবেশ নিয়ে তৈরি এই রিসোর্ট।
কিভাবে যাবেন?
নরসিংদী, ভৈরব বা কালিগঞ্জ এর বাসে পুবাইল কলেজ গেট নেমে পড়ুন।বামে রাস্তায় ব্যাটরী চালিত রিক্সায় করে প্রায় তিন মাইল গেলেই পাইলট বাড়ি বা জল জঙ্গলের কাব্য।
খরচটা একটু বেশী। তবে খাবার সেই খরচের ভেতরেই থাকবে। সারাদিনের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকা (সকালের সাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে স্ন্যাক্স)।এক দিন এবং একরাতের জন্য ৩০০০ টাকা জন প্রতি। শিশু, কাজের লোক ও ড্রাইভারদের জন্য ৬০০ টাকা জন প্রতি।
নাস্তায় চিতই পিঠা, গুড়, লুচি, মাংশ, ভাজি, মুড়ি এবং চা। দুপুরের খাবার হিসেবে ১০/১২ রকম দেশী আইটেম। মোটা চালের ভাত, পোলাও, মুরগির ঝোল, ছোট মাছ আর টক দিয়ে কচুমুখির ঝোল, দেশী রুই মাছ, ডাল, সবজি এবং কয়েক রকমের সুস্বাদু ভর্তা।
খাবারের আয়োজনের ত্রুটি রাখেননি এখানকার কর্তৃপক্ষ।
তথ্য অনলাইন।